১৯শে জুন । প্রভুযেসুর ১৬৩২ তম বৎসর

কোমরে কলস নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে চলেছে পাঁচটি তরুণী কন্যা। পাঁচজনই নবৌঢ়া, চলতে চলতে তারা কলহাস্য করছে আর কৌতুকচ্ছলে একে অপরের বেণী ধরে আকর্ষণ করছে ফলে পর্যায়ক্রমে হাসির পালা চলেছে ঝরণার কলতানের মত। কন্যাদের পরণে জানুদীর্ঘ ঘরে বোনা তাঁতের শাড়ি আর চুলে তারা রক্তজবা পরেছে। বাংলার তরুণী সধবার গৃহকর্ম অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য ও দীর্ঘায়িত – সাঁঝের বেলা নদীতে জল আহরণ করতে যাওয়া তাদের একপ্রকারের আনন্দময় অবসর। নদীতে যাওয়ার পায়ে চলার পথটি মাটির, পথের দুইপার্শ্বে বৃক্ষের সারি আর তার ফাঁক দিয়ে যতদূর নজর চলে আদিগন্ত ধান্যের ক্ষেত। সন্ধ্যার আকাশ ঘননীল আর অস্তমিত সূর্যের উজ্জ্বল কমলা বর্ণে উদ্ভাসিত; দক্ষিন আকাশে ধ্রুবতারা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়। পথের পাশের বৃক্ষে পাখিদের কলকাকলি নিরবিচ্ছিন্ন, গ্রাম্যবধূদের উচ্চহাস্যও সেই কূজন স্তিমিত করতে অসমর্থ।

শীঘ্রই পুরুষেরা কৃষিকাজ সমাপ্ত করে গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। পল্লীর কুটিরগুলির সন্মুখস্ত অঙ্গনে তুলসীতলায় প্রজ্জ্বলিত হবে সন্ধ্যাপ্রদীপ আর পল্লীর আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে শাঁখের আওয়াজ। বৃদ্ধারা সংসারের মঙ্গল কামনায় ইষ্টনাম উচ্চারণ করবেন। পল্লীবাংলার এই শান্তিময় স্নিগ্ধরুপটি দেখে মনে হবে স্বর্গ যদি কোথাও সত্যই থাকে তাহলে তা আছে বাংলার মাটিতেই।

জল সইতে যাওয়ার পথটি নদীর তীরের কাছে শেষ হয়ে যেতেই পথপার্শ্বের বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনও উধাও হয়েছে। ইষৎ উঁচু নদীতীরের উপর কন্যারা যেখানে এসে দাঁড়াল সেখানে সবুজ ঘাস মখমলের মত মসৃণ আর সেই গালিচা সদৃশ তীরভূমি এলিয়ে পড়েছে দিগন্তবিস্তৃত এক অতিকায় জলধারার বুকে। কন্যারা হরিণীর মত চপল পায়ে নেমে এল নদীর পাড়ে পড়ে থাকা অর্ধনিমজ্জিত এক সুবিশাল প্রস্তরখন্ডের উপর। কোন সুপ্রাচীন কালে এখানে এসে পড়েছিল এই পাথর, বর্তমানে সে সর্বাঙ্গে শৈবালাচ্ছিত হয়ে গ্রাম্যবধুদের পদসেবা করছে। একটি কন্যা খেলার ছলে তার সঙ্গিনীর গায়ে জল ছেটাতেই সকলে আনন্দে হেসে উঠল। অপর এক কন্যা নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৎস্যকন্যার মত অনায়াস ভঙ্গিতে সাঁতার কাটতে লাগল। বধূরা সন্তরণপটিয়সীর উদ্দেশ্যে সমস্বরে চিৎকার করতে লাগল।

‘পাড়ে আয় মুখপুড়ি। ঠান্ডা লেগে মরবি যে!’ তারা বলতে লাগল। জলকন্যা মুখ দ্বারা জল উদগীরণ করে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলল, ‘মা গঙ্গার পরশে গা জুড়ায় রে!’

‘মাগঙ্গা না হাতি। দামোদর হল পুরুষ। সে তো তোকে ছুঁতে পারলে আর কিছু চায় না!’ এই বলে বধূরা একে অন্যের গায়ে পড়ে হাস্যলাস্য করতে লাগল। বাংলায় নদীর লিঙ্গভেদ আছে। গঙ্গা মমতাময়ী মাতৃস্বরুপা হলেও দামোদর নদ পুরুষ। শক্তিশালী, উচ্ছৃঙ্খল ও নির্দয় দামোদর মাঝে মাঝেই ক্ষিপ্ত বন্যার স্রোতে দুই তীর অতিক্রম করে পল্লী ও জনপদ ধ্বংস করে দেয়।

মাটির কলসগুলি ভালভাবে ধৌত করে কন্যারা একে একে সেগুলি নদীর জলে ডুবিয়ে বগবগ শব্দে ভরতে লাগল। ততক্ষণে সাঁতার শেষ করে কন্যাটি পাড়ে ফিরে এসেছে, সে তার সিক্ত বসন হাত দিয়ে চেপে জল নিষ্কাশন করার প্রয়াস করতে লাগল। কন্যা উদ্ভিন্নযৌবনা, সিক্তবসন তার দেহবল্লরীর প্রতিটি রেখা স্পষ্ট করে তুলেছে, সে নদীর তীরের দুইদিকে দেখতে লাগল যদি কোথাও একটু আড়াল মেলে যেখানে সে তার সিক্তবসন খুলে একটু শুকিয়ে নিতে পারে। এই সময় অস্পষ্টভাবে তার চোখে পড়ল দুরে, যেখানে বৃক্ষের সারি এসে সবুজ ঘাসের গালিচায় শেষ হয়েছে, সেখানে একটা কিছু পড়ে আছে। আঙুল তুলে দেখাতেই বধুর দল কলস ফেলে সেইদিকে দৌড় দিল।

কাছে গিয়ে দেখা গেল সেটি এক যুবতী নারীর দেহ। দেহটি সম্ভবত জোয়ারের জলে ভেসে এসেছে। নগ্নপ্রায় যুবতীটির পরনে ছিন্ন বস্ত্র, দেহটি মরা মাছের ন্যায় বিবর্ণ ও বালির মধ্যে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। উত্তেজনায় কন্যাদের চক্ষু কপালে উঠল। 

‘মরেছে না কি?’ কম্পিত কন্ঠে একজন বলল।

‘মড়া ছুঁয়ো না কেউ।’ আরেকজন উদ্বিগ্ন স্বরে বলল।

বধূদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত পরিনতবয়স্কা এক যুবতী বিরক্ত স্বরে বলল, ‘চুপ কর। তোরা কি বৈদ্য নাকি, না ছুঁয়ে বলে দিচ্ছিস মড়া?’ এই বলে সে দেহটিকে উল্টে চিত করে দিয়ে তার বুকে কান দিয়ে শুনতে লাগল।

‘হায় হায়, এ যে এখনও বেঁচে আছে গো!’ বলল সে। পাঁচ বধুই সেই দেহটি ঘিরে বসে পড়ল। তাদের একজন বালিমাখা মাথাটি তার কোলে তুলে নিতেই যুবতীর বন্ধ চোখের তারা কেঁপে উঠতে লাগল আর মুখ দিয়ে কতকটা জলের বুদবুদ সহ গোঙানির ক্ষীণ আওয়াজ নির্গত হল।

এই অত্যাশ্চর্য আবিস্কার এই গ্রাম্যবধুদের পক্ষে এমন উত্তেজনার সঞ্চার করল যে গ্রামে এই বার্তা পৌঁছতে দেরি হল না। অবিলম্বে অর্ধেক গ্রাম এসে দামোদরের তীরে ভেঙ্গে পড়ল। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা ধরাধরি করে অর্ধমূর্ছিতা যুবতীকে বৈদ্যর কাছে এনে হাজির করলেন। শশ্রুশোভিত গ্রামবৈদ্য যতক্ষণে তাঁর পুঁথিপত্র সহ উপস্থিত হয়ে কন্যাকে পরীক্ষা করতে লাগলেন, গ্রামের বধুরা তাকে মৃত্তিকাপাত্রে গরম দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। এই উত্তেজনার মধ্যে যুবতী জ্ঞান ফিরে পেয়ে চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চতুর্দিক দেখতে লাগল।

‘ভয় পেয়ো না মা, এই দুধটুকু খাও। তাহলেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে।’ বৃদ্ধ বৈদ্য আশ্বাসের স্বরে বললেন। তাঁর হৃদয় কোমল, স্বগৃহে তাঁর সমবয়সী কন্যা আছে।

এক শুভ্রকেশ বৃদ্ধা যুবতীর অর্ধনগ্ন শরীর তাঁতের শাড়ী দ্বারা আবৃত করতে করতে বলল, ‘তুমি কাদের বাছা গো? কোন গাঁয়ে ঘর?’

এই প্রশ্ন করামাত্রই গ্রামবাসীদের কৌতূহলের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। সকলেই একযোগে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। যারা আর জিজ্ঞাসা করার মত প্রশ্ন খুঁজে পেল না তারা বিবিধ প্রকারের আষাঢ়ে অনুমান বিজ্ঞপ্তির মত জাহির করতে লাগল।

‘নৌকাডুবি হয়ে ভেসে এসেছে।’ বলল একজন।

‘অসম্ভব। বর্ষাকালে কেউ নদী পারাপার করে না।’ বিজ্ঞের মত বলল এক মধ্যবয়স্ক কৃষক।

‘পরনের শাড়িটা দেখেছ? এমন মোটা সুতোর শাড়ি জেলেনিরা পরে।’ ভিড়ের মধ্য থেকে এক মহিলা মন্তব্য করল।

একথা শুনে মধ্যবয়স্ক কৃষক বলল, ‘শাড়ি কোথায় গো? এ মাগী তো আধল্যাংটা!’

‘মরণ! মিনসের কথা শোন!’ কৃষকের স্ত্রী রাগত স্বরে বলে, ‘আধল্যাংটা মেয়েছেলে দেখতে এসেছে। ঘরে যাও।’

অন্ধকার ঘনায়মান হয়। গ্রামবাসীরা রেড়ির তেলের লন্ঠন জ্বালিয়ে বৈদ্যমশাইএর ঘরের দাওয়ায় টাঙ্গিয়ে দেয়। শুভ্রকেশী বৃদ্ধা কন্যাকে জড়িয়ে ধরে থাকে বুকের মধ্যে। তার জ্ঞান সম্পূর্ণ ফিরেছে এতক্ষণে, বিস্ফারিত চক্ষে সে সকলকে দেখতে থাকে। বৃদ্ধা তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দুধ খাইয়ে দেয়।

‘তোর নাম কিরে হতভাগী?’ কন্যার কানে ফিসফিস করে বৃদ্ধা ।

‘নিশিবালা।’ স্তিমিত কন্ঠে বলল কন্যা। বলেই সে শিশুর মত বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরল। মমতার স্পর্শে তার মুখে কথা ফুটেছে।

– ‘কাদের ঘরের ছুঁড়ি তুই?’

নিশিবালার বড় বড় দু চোখ থেকে উষ্ণ অশ্রুর ধারা নামতে থাকে। তার আর ঘর নেই। এক রাত্রের বিভীষিকায় তার জীবন বরাবরের মত পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

‘আচ্ছা আচ্ছা। কাঁদে না, কাঁদে না।’ বলতে বলতে পক্ককেশ বৃদ্ধা তার চোখ মুছিয়ে আধভেজা মস্তক চুম্বন করে। 

গ্রামবৈদ্য নিশিবালার নাড়ি পরীক্ষা করে বললেন, ‘শরীরে কাঁপুনি আছে। একে শুকনো কাপড় পরিয়ে দাও। পথ্য হিসেবে উষ্ণ জলে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।’ 

বৈদ্যের পরামর্শে মহিলারা নিশিবালাকে ঘরের অভ্যন্তরে নিয়ে গিয়ে পরিচ্ছন্ন শুষ্ক শাড়ি পরিয়ে দেয়।

‘গায়ের রং একটু চাপা বটে কিন্তু ছুঁড়ির রুপের বাহার আছে!’ একজন মহিলা মুখ টিপে হেসে বলল। তাকে ঘিরে মহিলাদের কথোপকথন নিশিবালা ঠাহর করে উঠতে পারে না। কথিত আছে বাঙ্গালায় প্রতি দশ ক্রোশে কথ্যভাষা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে আদি যশোহরের সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষ, এই বাঙ্গালা বুলি তার সম্পূর্ণ বোধগম্য নয়।

বাহিরে গ্রামের প্রবীণরা নিশিবালার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। এই অপরিচিতা কন্যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কে নেবে? স্ত্রীলোক স্বাধীন জীব নয়, বিধবা ব্যতীত নারীর প্রতিপালকের প্রয়োজন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি হতে চলেছে, এর রাত্রিবাসেরই বা কি ব্যবস্থা হবে? দিনমান হলে সহজেই গ্রামপ্রধানের পরামর্শ ও নির্দেশ নেওয়া যেত কিন্তু সূর্যাস্তের পরে তাঁকে বিরক্ত করার সাহস নেই কারুর।

পক্ককেশ বৃদ্ধা দাওয়ার বসে গ্রামবাসীদের উত্তেজিত আলোচনা শুনছিল। সে এগিয়ে এসে বলল, ‘আমি একাই থাকি। আমার কাছে আজ রাতে ঘুমাক না!’

একাদশী সর্দার রাত্রির অন্ধকার গাঢ় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল। দীর্ঘ সন্তরণে তার সর্বাঙ্গ সিক্ত এবং ক্লান্ত। জোয়ারের সময় দামোদরে সাঁতার কাটা সাধারণ কর্ম নয়। জলের মধ্যে তীর পাঁচশত হাত দূরবর্তী দেখে মনে হয় সহজেই এই দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে, কিন্তু প্রবাহিত জলস্রোত সন্তরণকারীকে কয়েক ক্রোশ দূরে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। একাদশীর কঠিন জলচর জীবন তাকে অত্যন্ত দক্ষ সন্তরণকারীরুপে গড়ে তুলেছে, দামোদরের ঘুর্ণি আর চোরা স্রোতের সঙ্গে লড়াই করতে করতে সে কমপক্ষে এক লীগ দূরে গিয়ে পায়ে মাটি পেয়েছে। যাদের দক্ষতা নেই তারা এমন স্রোতে নিশ্চিত মারা পড়বে। স্রোতের সঙ্গে যুঝতে যুঝতেও সে গ্রাম্যবধুর সাহস ও দৃঢ়তা দেখে চমৎকৃত হয়েছিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই এই কন্যা তার নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছিল।

এখন সে একটি পিপুল বৃক্ষের নীচে বসে আছে। তার সামনে পড়ে আছে তৃণাচ্ছাদিত নদীতীর, ইতস্তত গুল্মবেষ্টিত সেই অপরিচিত নদীতীরবর্তী অঞ্চল নক্ষত্রালোকে অবগুন্ঠিত হয়ে আছে। আধেক অন্ধকারের মধ্যে কতকগুলি নৌকার অবয়ব অধিকতর কৃষ্ণকায় দৈত্যের মত প্রতিভাত হচ্ছে। একাদশী জানে এগুলি কাষ্ঠপীড়কের উপর মেরামতের জন্য রাখা, যদিও এসময়ে সম্পূর্ণ জনবর্জিত। নিশ্চয়ই আশেপাশে অল্প দূরত্বেই কোন পল্লীগ্রাম আছে। বৃক্ষের কান্ডে হেলান দিয়ে একাদশী মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করতে লাগল।

দিয়োগোর নৌবাহিনী তার জন্যে অপেক্ষা করেনি। সে এমনটা আশাও করেনি। কাপ্তিনকে সে যদি কিছুমাত্রও চিনে থাকে, সে জানে প্রতিবার জোয়ার পরিবর্তনের সময় দিয়োগো তাকে খুঁজবে। বৎসরের পর বৎসর একত্রে থাকার ফলে তারা দুজন এমন হরিহর আত্মায় পরিনত হয়েছে যে একজন অন্যজনের মন পড়তে পারে।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর একাদশী গাত্রোত্থান করে নিকটবর্তী নৌকাটিতে আরোহন করল। নৌকাটি প্রচলিত পাতিয়া; মধ্যে ছইঘর, পিছনে হাল এবং খোলের মধ্যে মাল রাখার ব্যবস্থাসহ এ জাতীয় নৌকা দক্ষিণবঙ্গে অতিপরিচিত – এ নৌকা ধীবর এবং সদাগর উভয়েই ব্যবহার করে থাকে। একাদশী নৌকাটির অভ্যন্তর খুঁজে দেখে অবতরণ করে পরের নৌকাটির দিকে অগ্রসর হল। অবশেষে তৃতীয় নৌকাটির খোলের মধ্যে মাছধরার জালের একটি কুন্ডলী, কিছু পরিধেয় বস্ত্র আর একটি গামোছা পাওয়া গেল। গামোছা বাঙ্গালার হাতে বোনা জনপ্রিয় বস্ত্রখন্ড – যেহেতু এটি শরীর মুছতে আর মস্তক আচ্ছাদিত করতে ব্যবহার করা যায়, সকলেই একটি  গামোছা সঙ্গে রাখে। পথিকেরা গামোছা শুষ্ক খাদ্যদ্রব্য বহন করার জন্যেও ব্যবহার করে। একাদশী সিক্ত পরিচ্ছদ ত্যাগ করে একটি ধূতি মালকোঁছা করে পরল আর গামোছাটি কোমরে বেঁধে নিল। তারপর দীর্ঘ কেশ গ্রাম্য প্রথায় মাথার উপরে ঝুঁটি করে বাঁধল সে। এরপর কাঁধে মৎস্যজালিকার কুন্ডলীটি তুলে নিতেই তাকে যে কোন ধীবরের মত দেখতে লাগল। মার্জারের মত লঘু অনায়াস ক্ষিপ্রতায় নৌকার উপর থেকে লাফ দিয়ে নেমে একাদশী দুরের বৃক্ষসারির দিকে পদচারণা করল।

নদীতীর ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে একটি বাঁধে এসে মিশেছে। সেই বাধেঁর উপর পায়ে চলার পথ। বাঁধের ভূমিভাগের দিকে প্রান্তরবিস্তৃত সুবিশাল ধান্যক্ষেত্র। এই বাঁধ অবশ্যই দামোদর নদের অকস্মাৎ প্লাবনের গ্রাম্য প্রতিরোধ, সুতরাং নিশ্চিতভাবে নিকটেই জনবসতি আছে। একাদশীর পদচারণার মধ্যেই দিকচক্রবালের মধ্য থেকে আকাশে চাঁদের আবির্ভাব হল – ক্রমে জোৎস্নালোকিত দিগন্তপ্রসারী শস্যক্ষেত্র আর বাঁধের উপর বৃক্ষবেষ্টিত পথটি রুপালী আর কালো রঙে আঁকা একখানি তৈলচিত্রের মত উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। রাত্রির বাতাসে জোৎস্নাখচিত বৃক্ষশাখাগুলি দুলে দুলে অশরীরীর মত হাতছানি দিতে লাগল। পথিপার্শ্বের চিল্লকধ্বণি কানে তালা লাগিয়ে দেয়। চাঁদের অবস্থান দেখে সময়ের অনুমান করে একাদশী বুঝল এখন সন্ধ্যারাত্রি। সাধারণত বাঙ্গালার গ্রাম্যজীবনে রাত্রির শুরুতেই মানুষ নিদ্রার আয়োজন করে, তবে একটু বড় জনপদে এসময় পূজার্চনা বা লোকগীতের আসর জাতীয় নৈশাবকাশও যে থাকে না এমনও নয়। উত্তর দিকের আকাশে বিচ্ছুরিত আলোকের ক্ষীণ ছটা দেখা যাচ্ছে – একাদশী  সেই আলোকবর্তিকার দিকে অগ্রসর হতে লাগল।

এক সহস্র পদক্ষেপের মধ্যেই এসে পড়ল এক সুবৃহৎ প্রাচীন বটবৃক্ষ। বৃক্ষমূল কতকগুলি লন্ঠনের আলোয় সজ্জিত, সেখানে একটি সিন্দুরচর্চিত প্রস্তরখন্ডের চারিপাশে বসে আছে কিছু লোক। আকার আকৃতিতে মনে হয় ঐ প্রস্তরখন্ডটি শিবলিঙ্গ।

কে যায়? একজন উচ্চকন্ঠে একাদশীর উদ্দেশ্যে বলল। সম্ভবত এরা শৈব উপাসক।

সম্ভ্রমজনক দূরত্বে দাঁড়িয়ে একাদশী সংযত কন্ঠে বলল, ‘আজ্ঞে আমার নাম একাদশী দাস, পিতা হরিহর দাস।’ বাঙ্গালার দৃঢ়নিবদ্ধ বর্ণার্শ্রিত সমাজে দাস একটি নিরপেক্ষ পদবী। অর্থগতভাবে দাস বলতে ভৃত্য বোঝায় কিন্তু শিক্ষক বা যোদ্ধা ব্যতীত যে কোন পেশার মানুষের উপাধি দাস হতে পারে, এর থেকে মানুষটির সম্পর্কে কোন বিশেষ ধারণা করা যায় না। পিতার নাম পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আবশ্যিক পরিচয় জ্ঞাপক উত্তর।

  – কোন গ্রাম?

প্রশ্নটি জটিল। একাদশী স্থানীয় পল্লীগুলির নাম জানে না। দ্রুত চিন্তা করে সে জানাল তার গ্রামের নাম রসুলপুর। এই নামে দশ পনের লীগ দক্ষিণে সত্যই এক পল্লীগ্রাম আছে। এছাড়াও ইসলামের আবির্ভাবের পরে ঐ একই নামে বাঙ্গালায় একাধিক জনপদ আছে বলে শুনেছে সে। দক্ষিণের রসুলপুর থেকে কেউ এতদুর পদব্রজে আসতে পারে না তবে আশা করা যায় প্রশ্নকর্তার ভৌগলিক জ্ঞান সীমিত। শিবভক্তদের একটু নিকটে এসে সে স্কন্ধস্থিত ম্যৎসজালিকা মাটিতে রেখে সতর্কভাবে বলল, ‘আমার নৌকাডুবি হয়েছে।’

লোকগুলি সতর্কদৃষ্টিতে তাকে দেখতে লাগল। একাদশী আড়চক্ষে দেখল একজন লোকের হাতের নাগালে একটি সড়কি আছে। সে অকস্মাৎ মাটির উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে শিবলিঙ্গকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করতে লাগল। তারপর উঠে বসে অনুচ্চ কন্ঠে ‘জয় হোক’ বলে মন্ত্র পড়ার ভঙ্গিতে দুহাত জোড় করে বিড়বিড় করতে লাগল। তার দেখাদেখি লোকগুলিও উচ্চকন্ঠে ভঙ্গসংস্কৃতে শিবের প্রশস্তিজ্ঞাপক মন্ত্র বলতে লাগল। একজন একাদশীর উদ্দেশ্যে বলল, তুমি শিবের ভক্ত?

আজ্ঞে। মহাদেব আমার ইষ্টদেবতা। গম্ভীরভাবে বলল একাদশী।

খুব ভাল। আমাদের গ্রামে স্বাগত। উৎসাহের সঙ্গে বলল লোকটি। তারপর একটু হেসে বলল, আজ আমাদের গ্রামে অতিথি আসার পালা চলছে।

একাদশী প্রতিহাস্য করে বলল, আমি অতিথি নই। নগণ্য দাস মাত্র।

  – আমরা সকলেই মহেশ্বরের দাসানুদাস।

এতক্ষণে একাদশী উঠে বসেছে। সে অনুনয়ের স্বরে বলল, এই গ্রামে কি কোন নৌকা ভাড়া পাওয়া যাবে? আমি স্বগ্রামে ফিরে শোধ দেব।

নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আজ এখানে রাতটা কাটাও। আমি কাল নৌকা খুঁজে দেব। সড়কি হাতে লোকটি বলল। তার গলায় বিশ্বাসের সুর। তুমি নিশ্চিত খুব ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত? ফের বলল সে।

  – আমি ঠিক আছি। গ্রাম কি কাছেই?

  – এই বটগাছের পিছনেই একশো হাত দুরে। এখন আমরা ফিরব। তুমি সঙ্গে এস।

সড়কিধারী উঠে দাঁড়াল। বাকিরাও তার পাশে দাঁড়াল। লোকটি সম্ভবত এই দলটির নেতা।

একাদশী উঠে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে অভিবাদন করে বলল, আপনাদের আতিথেয়তায় এ দাস ধন্য। তবে যদি আজ্ঞা করেন আমি বাবার নিকটেই আজ নিদ্রা দিই?

নেতা ইতস্তত করতে লাগল। গ্রাম্য সরলতায় সে আতিথ্যের বার্তা দিয়েছে বটে কিন্তু রাত্রের পর গ্রামে অপরিচিত অতিথি খুব বাঞ্ছিত নয়। সে খানিকটা অপ্রস্তুতভাবে বলল, ঠিক আছে, তাই হোক। তবে সতর্ক থেকো। বাংলাদেশে এখন সাপের থেকে বেশি ফিরিঙ্গির ভয়।

  – সে তো বটেই। তবে আপনাদের ইতিমধ্যেই একটি অতিথি আছে কিনা তাই আর ব্যস্ত করতে চাই না।

  – ওহো! না না সে ঠিক তোমার মত অতিথি নয়। বিকালবেলা দামোদরের তীরে এক অর্ধচেতন কন্যা ভেসে এসেছে। গ্রামের প্রবীণরা তাকে নিয়ে চিন্তিত। কাল সকালে প্রধান বিহিত না করা পর্যন্ত সে এই গ্রামেই থাকছে।

লোকগুলি নিষ্ক্রান্ত হতে তাদের ছেড়ে যাওয়া একটি লন্ঠন নিজের কাছে টেনে এনে একাদশী ভাবতে লাগল এরপর তার কি করা উচিত।

অব্যবহিত পরেই তার চিন্তার ছন্দপতন করে কিছু লোক লন্ঠন হাতে নদীর দিকে যাচ্ছে দেখা গেল। এরপর আরো কিছু লোক। ক্রমে ক্রমে কিছু মহিলা ও শিশু কিশোরকেও উত্তেজিত স্বরে কি যেন বলতে বলতে নদীর দিকে যেতে দেখা গেল। তারা সকলেই নদীর দিকে হাত তুলে কিছু একটা নির্দেশ করছে। তাদের নির্দিষ্ট দিকে তাকাতেই মনে হল ঘন অন্ধকারে পড়ে থাকা নদীর আকাশ যেন আলোকিত হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীদের ভিড়ে মিশে গিয়ে একাদশী নিকটবর্তী নদীবাঁধের উপরে উঠে দাঁড়াল। নদীতে যা দৃশ্যগোচর হচ্ছে তা যেমনি চমৎকার তেমনি ভয়ংকর।

হুগলীর তীরের অনতিদূরেই নদীর জল এক অতিকায় নৌবহরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। জাহাজগুলি দলে দলে উজানের দিকে চলেছে। এগুলি যে যুদ্ধজাহাজ সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই কারণ এ নদীতে নৈশপরিবহন সাধারণ পোতের পক্ষে অসম্ভব। জাহাজগুলি বিশাল, সহস্র মশাল আর লন্ঠনের আলোয় দৃপ্ত, শত শত দাঁড় ছন্দোবদ্ধভাবে উঠছে আর পড়ছে। জাহাজের পাটাতনে রাখা অশ্ব এবং প্রহরীদের এতদুর থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে – আর দেখা যাচ্ছে সারি সারি প্রস্তুত করে রাখা কামান। প্রত্যেক জাহাজে উড়ছে কালো মসলিনের উপর রুপালি চন্দ্রখচিত পরিচিত মুঘল ধ্বজা। জাহাজের সারির শেষ বা শুরু কিছুই দেখা যায় না।

গ্রামবাসীরা নির্বাক বিস্ময়ে এই দৃশ্য দেখতে লাগল। চন্দ্রালোক ভীষণদর্শন নৌকামানগুলির উপর পড়ে ঝিকমিক করছে আর জাহাজগুলির মশালের আলো অন্ধকার ভেদ করে নদীর জলকে কমলা বর্ণের করে তুলেছে। নদীর বাতাসে ভেসে আসছে অস্পষ্ট হ্রেষ্বাধ্বণি। জাহাজের দাঁড়গুলি যেন কোন অদৃশ্য জাদুকরের নির্দেশে একসঙ্গে উঠছে আর পড়ছে। একটি পোতও এই সুশৃঙ্খল পর্যাবৃত্ত গতি ভঙ্গ করছে না। কিছুক্ষণ এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হয় কোন কুহকিনী ডাইনীর নির্দেশে সমুদ্র থেকে এক অতিকায় সর্পদানব উঠে এসে পৃথিবীকে গ্রাস করতে চায়।

একাদশীর হিসেবে মনে হল জাহাজের সংখ্যা কয়েক শত – অর্ধ সহস্র হওয়াও বিচিত্র নয়। শক্তি ও আধিপত্যের এই প্রদর্শনী এতটাই প্রকট যে একাদশীর শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্কের শীতল স্রোত বহে যেতে লাগল। দিয়োগোর কারাভেলা এই জাহাজগুলির সামনে অকিঞ্চিৎকর নৌকার অতিরিক্ত কিছু নয়।

দিয়োগো তাভারেস মনে মনে তার প্রিয় সারেংএর অভাব অনুভব করল। কারাভেলার কাপ্তিনের সঙ্কীর্ণ কেবিনে গুটিকয় পর্তুগীজদের মধ্যে বসে আছে একচক্ষু জলদস্যুনেতা মিগুয়েল। নৌবাহিনী প্রথম তারই নজরে এসেছিল। প্রাথমিকভাবে দিয়োগোর মনে হয়েছিল অন্ধকারের মধ্য থেকে সে মুঘল নৌবাহিনীর মধ্যবর্তী অংশটিকে ঝটিকা আক্রমণ করবে। কিন্তু অবিলম্বেই তার এই পরিকল্পনার অসারতা বোঝা গিয়েছিল। প্রথমত সমস্ত জলদস্যু জাহাজগুলি দাসদের ভারে স্লথগতি আর দ্বিতীয়ত মাসকেটের অভাব না থাকলেও তার কারাভেলা ব্যতীত কোন জাহাজেই কোন নৌকামান নেই। এমন আক্রমণ আত্মহত্যার সামিল।

একাদশীর উপরে অসহায় রাগ হতে লাগল দিয়োগোর। সে এই নদী আর তার সমস্ত উপনদী, এমনকি আপাতঅজানা খাঁড়িগুলিকেও হাতের উল্টোপিঠের মত চেনে। অথচ এই সময়েই এই অভিযানের চেয়ে এক তুচ্ছ নারীকে তার বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হল!

‘সব আলো নেভাও!’ কর্কশ স্বরে আদেশ দিল দিয়োগো। এক এক করে কারাভেলার সব লন্ঠনগুলি নির্বাপিত হয়ে গেল। তারপর সে মিগুয়েলের দিকে ফিরে বলল, তোমার জাহাজে ফিরে যাও। কিছু দাসকে আপাতত মুক্ত করে দাঁড় প্রতি দুজনকে নিয়োগ কর। আমরা বাম দিকে ঘুরে দামোদর নদের উজানমুখে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকব।

মিগুয়েল এক চোখে দিয়োগোর দিকে পলকহীন তাকাল। সে সারাজীবন পোর্তো গ্রান্ডির নদী সমুদ্রে দস্যুতা আর লুঠতরাজ করে বেড়িয়েছে। নৌযুদ্ধের প্রকরণ আর প্রচালনার নিয়মশৃঙ্খলার প্রতি তার বিশেষ সম্ভ্রমশ্রদ্ধা নেই। নিজের অপরিচ্ছন্ন দাড়ি ধরে টানতে টানতে সে বলল, ‘ঐ মুঘল জাহাজগুলোকে এমনিই চলে যেতে দেব?’

হ্যাঁ। এমনিতেও আমরা ওদের থামাতে পারব না। টেবিলে পড়ে থাকা হাতে আঁকা নৌমানচিত্রের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্কভাবে বলল দিয়োগো। আমরা দামোদরের ভাঁটিমুখ ছেড়ে উপরে উঠে এসেছি। স্যান্ডিপোর নামে একটা গ্রামের কাছে দামোদরের উজানমুখ। এখান থেকে দু লীগ দুরে। প্রয়োজনে ওখানে আমাদের দু এক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।

পেদ্রো নামের আরেক জলদস্যু সর্দার বলল, স্থানীয় বাজারে দাসগুলোকে বিক্রি করে দিয়ে হুগলীতে টাকা নিয়ে গেলে কেমন হয়? এদের জন্যে জাহাজ ভারী হয়ে গেছে।

টেবিল থেকে সরে এসে দিয়োগো তার তরবারি বার করল। পর্তুগীজরা এই ধরনের তরবারিকে বলে কলহনা। তরবারির উপরিভাগ, যাকে কারাক বলে অভিহিত করা হয়, সেটি সম্পূর্ণ কালো, নিচের দিকে বড়সড় স্বর্নাভ গোলাকার হস্তবন্ধনী। মুঘল তরবারির তুলনায় কলহনার দৈর্ঘ্য কম কিন্তু অপেক্ষাকৃত চওড়া এই তরবারির বক্র উপরিভাগ ওজন এবং ভারসাম্যে অনন্য। কলহনার এক কোপে অশ্বের মুন্ডচ্ছেদ করা যায়। দিয়োগো তরবারি প্রসারিত করে টেবিল থেকে মানচিত্রটি তুলে ধরতে দা কুনহা সেটি সযত্নে ভাঁজ করে সরিয়ে রাখল।

প্রিয় প্রাইভেটিয়র বন্ধুগণ! এখানে আমি, কাপ্তিন দিয়োগো তাভারেস স্পেন ও পর্তুগালের মহান নৃপতির প্রতিনিধিত্ব করছি। আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করছি না, আদেশ দিচ্ছি।’ শীতল গলায় বলল দিয়োগো।

সকলের কথা বন্ধ হয়ে কেবিনে নীরবতা নেমে এল। সেই নীরবতার মধ্যে দা কুনহা এবং কারাভেলার অন্য নাবিকদের অসি মুক্ত করার ধাতব শব্দ হতে লাগল।

মিগুয়েল অট্টহাস্য করে মাথা থেকে টুপী খুলে দিয়োগোকে অভিবাদন করে বলল, বিলক্ষণ মার্কুই! আপনার ইচ্ছাই আমাদের কাছে আদেশ। তার কন্ঠস্বরে ব্যঙ্গের আভাস।

তারপর একে একে জলদস্যু নেতারা ছায়ার মত রাত্রির অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!