সাদা কাক

মল্লিকার ফের মাথা ব্যাথা করছে। সে আড়চোখে একবার ঘড়ি দেখল। মোটকু দোকানমালিক আরও একঘন্টা হেজিয়ে তবে ছাড়বে। রাগে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল মল্লিকার।

অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার দিনটা কিন্তু ফাটাফাটি শুরু হয়েছিল। ফাটাফাটি মানে তার দিনগুলো সচরাচর মোটেই এমন হয় না। ঠিক সময়ে ঘুম ভেঙ্গেছিল (নরম্যালি বার তিনেক অ্যালার্মক্লক থাবড়ে শেষে লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়তে হয় তাকে)। জানলার বাইরে ঝকঝকে ভোর ছিল একটা। সিগারেট ধরিয়ে অচেনা সেই সকাল দেখেছিল মল্লিকা। গতকালের মত শাওয়ারের জল উধাও হয়ে যায়নি (বাড়িউলি মাসিমা দীর্ঘজীবি হোন)। ম্যাজিকের মত দুটো ডিম ভেজে ফেলা গেছিল, দুপিস টোস্ট বানিয়ে ফেলা গেছিল আর আশ্চর্যের কথা ফ্রিজে রাখা ফলের রসের অবশিষ্টাংশ দিয়ে একটা ভদ্রগোছের ব্রেকফাস্টও করে ফেলা গেছিল। তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়লে সময় তাড়া করে বেড়ায় না। মল্লিকার ছন্নছাড়া সিংগল জীবনে দিনটা খুব শান্ত আর আয়েশীভাবে শুরু হয়েছিল।

কাল রাতে তার এই একচিলতে ফ্ল্যাটে রজতের সঙ্গে দুর্দান্ত ভালোবাসাবাসি হয়েছিল। রজত সোফার উপর পেড়ে ফেলেছিল তাকে, ধাক্কাধাক্কিতে টেবিলল্যাম্প উলটে পড়েছিল। ওহ ফাক, সরি! বলেছিল রজত। মল্লিকা হিহি করে হেসেছিল। ঘন আনন্দের অনুভূতি ছিল একটা, কারণ রজত তার অফিসের ন্যাকা মেয়েটার খপ্পর থেকে তার কাছে ফিরেছে আবার। পুরো বলিউডি চিত্রনাট্যের মত ছিল ব্যাপার। স্নান করে অফিসের জন্য পোষাক পরতে পরতে মল্লিকা সেন গুনগুন করে গানও গেয়ে ফেলেছিল দুএক কলি।

আর তখনই কাকটা দেখেছিল সে। ধপধপে সাদা রংয়ের একটা কাক। জানালার বাইরে কেবলের তারে বসে ঘাড় বেঁকিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। হাতে লিপস্টিক নিয়ে আয়নার সামনে জমে পাথর হয়ে গিয়েছিল মল্লিকা। চোখ বন্ধ করে, শ্বাস বন্ধ করে মনে মনে বলেছিল, যা। চলে যা। আমি দেখিনি।

মোটেই চলে যায়নি কাকটা। ঠায় বসেছিল। রোদ্দুরে চকচক করছিল তার সাদা চঞ্চু। পারফেক্ট একটা শহুরে কাক। আর পাঁচটা কাকের মতই। খালি কালো নয়, ঠোট থেকে লেজ পর্যন্ত একেবারে সাদা। করভাস চক্ষু দিয়ে প্যাটপ্যাট করে তাকে দেখছিল।

ফলে মল্লিকা জানত আবার তার মাথাব্যাথা শুরু হবে। জানত ফের সে সাক্ষী হবে কিছু ভয়ংকর ঘটনাক্রমের। এমন ঘটনাক্রম যাকে প্রতিহত বা পরিবর্তিত করা সম্ভব নয়। আতঙ্কে পঙ্গু হয়ে যেতে যেতে, ত্রাসে জ্ঞান হারাতে হারাতেও তাকে কেন্দ্র করে ঘটতে থাকা সেই হাড়হিম করা ঘটনাগুলির থেকে তার নিস্তার নেই। ভয় যেন একটা সূক্ষ রেখায় আঁকা ত্রিমাত্রিক ছবি, সে ঐ ছবির সাবজেক্ট আবার দর্শক, দুইই। এই হচ্ছে নিয়তি। কিচ্ছু করার নেই তার।

ঈশ্বর জানেন চেষ্টা কিন্তু করেছে মল্লিকা। জীবনটাতো আর স্টিফেন কিংয়ের গল্প নয়। মল্লিকা এই ভয়াবহ অলৌকিক ঘটনাবলীর থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। রিয়া গুহ তার বেস্ট ফ্রেন্ড। রিয়াকে সব বলেছে সে। রিয়া বিশ্বাস করেনি। বিশ্বাস করা কঠিন।

সাদা কাক? কফি কাপে ফুঁ দিতে দিতে চশমার রীমের উপর দিয়ে বড় বড় চোখ করে বলেছিল রিয়া।
হ্যাঁ। পুরো সাদা। ঠোঁট থেকে ল্যাজ অবধি। ঠ্যাং গুলোও।

কিছুক্ষন মল্লিকার দিকে তাকিয়ে থেকে রিয়া বলেছিল, শুনেছি আমেরিকার কোথাও কোথাও সাদা কাক দেখা যায়। রিয়া ইন্টারনেট টাইপ। প্রচুর পড়াশুনো করে।

আমি কলকাতায় দেখছি। মল্লিকা বলেছিল।

[সম্পূর্ণ গল্পটি epub ফরম্যাটে পড়ার জন্যে এখানে ক্লিক করুন। epub আপনি মোবাইল ফোন, ট্যাব বা পার্সোনাল কম্পিউটারে সহজেই পড়তে পারবেন। মূল্য ৪০ টাকা ]

epub কি ভাবে পড়বেন জানতে হলে দেখে নিন এখানে

<<<<< ছোটগল্প সংকলনে ফিরুন

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!