লঙ্কা নয় মরিচের ঝাল

সত্যজিৎ রায়ের বায়োগ্রাফি পড়ে শেষ করে দিনদুয়েক বইমুখো হইনি। তারপর মনে পড়ল অনেকদিন ধরে শিবাসিস মুখোপাধ্যায়ের ‘কাহ্ন’ বইটি পড়ার ইচ্ছে ছিল। এটি শরদিন্দুর পরে সম্ভবত সার্থক একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ যার নায়ক চর্যাগীতির বিস্মৃতপ্রায় কবি কাহ্ন পা। কিন্তু বইটি খুঁজে পাওয়া গেল না। না ডিজিট্যাল না মুদ্রিত সংস্করণ। প্রকাশক ছিলেন বোধহয় সপ্তর্ষি, তাদের ঠিকানাও আমার জানা নেই। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ধনপতির সিংহলযাত্রা’। আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত এই বইটি আমার পড়ার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। রামকুমার শুরু করেছেন এইভাবে:
“পারলে গোধূলির এই রং গণ্ডূষে শুষে নিত ধনপতি। ওই কেশকালা ফিঙেটির মতো দোল খেত কর্ণের মাথায়। পশ্চিমের কমলা সূর্যের মতো দিনশেষে ডুবে যেত ভ্রমরার জলে। গিরি মাটিরঙে রাঙিয়ে দিত আকাশের কোল। কিন্তু তাকে যেতে হবে সিংহল দেশে, নোনা পথে—রাজার নির্দেশ।”

ভাষার সৌকর্যে এই বইটি অনন্য, বলা চলে ইয়ুরোপীয় প্রভাবে (বা ইংরেজির ধাঁচে) বাংলা গদ্য লেখার পূর্বে মঙ্গলকাব্যের সময় যদি বাংলা গদ্য থাকত, সেটি মোটামুটি এইরকম হতে পারত। এই গদ্য খুব interesting বটে, তবে উপন্যাস হিসেবে ‘ধনপতির সিংহলযাত্রা’ যে খুব উৎরেছে তা বলতে পারছি না।

দুটি জিনিষ কৌতূহলোদ্দীপক।
এক, এখন অলস বদনামের ভাগী হলেও বাঙ্গালী চিরকাল এমন ছিল না বোধহয়। রামকুমারের কাহিনীর যদি ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকে তাহলে দেখা যাচ্ছে বাঙ্গালী একসময় ব্যবসা বানিজ্যে পটু ছিল (চাঁদ সদাগর), উপরন্তু নৌবানিজ্যেও তার পারঙ্গমতা ছিল।
দুই, পাতা উল্টে পড়লুম: “কটু তৈলে ভাজা হয় বেথুয়া শাক। সুক্তা রন্ধন হয় বাগ্যন, কুমুড়া, কচা, কাঁচকলা, সজিনা, মোচার সঙ্গে মশল্লা মিশিয়ে। সন্তলন হিঙ্গু–জিরা–মেথির। রসবাস–হিঙ্গু–জিরা দিয়ে মুসুরি–মটর সূপ চাপে। ঘৃতে ভাজা হয় পাঁচ সহস্র পলাকড়ি। ঝোল হয় মানকচা, বড়ি, মরিচ ভূষিত কাতল মীনের। খর লবণে আম্র ও শকুল মীনের অম্বল বড়ো পছন্দ সদাগরের।”
বেথো শাকভাজা, সুক্তো, পটলভাজা, মানকচু বড়ি দিয়ে কাতলা মাছের ঝোল, আমশোলের অম্বল, মানে খাওয়াদাওয়া মোটামুটি একইরকম ছিল। তবে লঙ্কা তখনো আসেনি, মরিচের ঝাল।

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!