দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে

ফেসবুকের দেওয়ালে কি লিখব-র চেয়ে কি লিখব না, সেই ধারণাটি বেশী মজবুত হওয়া উচিত। নীরবতারও স্বতন্ত্র অর্থ আর প্রয়োজনীয়তা আছে। অনেকে ভাবেন, দেয়াল আমার, আমার যা খুশী তাই লিখব, অনেকে এই ধারণাটি রক্ষাকবচের মত ব্যবহারও করেন, বিশেষত সমালোচিত হলে। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ঠিক নয়।

প্রথমত; বিদ্বেষমূলক, হিংস্র, আগ্রাসী বা অশ্লীল বক্তব্য (লেখা বা ছবি) এমনিতেই ফেসবুকের নিজস্ব নিয়মে অপসারণযোগ্য। আপাতদৃষ্টিতে তেমন বোঝা না গেলেও এইজাতীয় একটি censoring ফেসবুকে হয়েই থাকে। ফেসবুক একটি জনসংযোগ মাধ্যম, এখানে যে কোন postকেই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে ধরে নেওয়া হয়, এমনকি নিজের দেওয়ালেও। কারুর আপত্তিজনক মনে হলে report করার ব্যবস্থাও আছে। এর সঙ্গে ভারতীয় সংবিধানবিধির প্রকাশ্য আচরণ ও বত্তব্য প্রকাশের নিয়মনীতিগুলিও সরাসরি জড়িত। সুতরাং অনেকদুর উদারতা থাকলেও প্রকাশ্য জনসংযোগ মাধ্যমে কি লেখা হবে তার নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।

এ তো গেল সরাসরি অসৎ উদ্দেশ্যে দেওয়া postএর কথা। কিন্তু এমন অনেক post আছে যেগুলিকে এই গোত্রে ফেলা না গেলেও, সামাজিকভাবে ক্ষতিকর বলে মনে হয়। এইখানে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে পড়ে কারণ মুক্তসমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এর সঙ্গে জড়িত। তবে স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচার এক নয়, স্বাধীনতা নিতে গেলে দায়িত্বশীল হতে হয়। যুক্তিগ্রাহ্যতা, সহনশীলতা এবং স্বচ্ছতা সেই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমার প্রকাশিত মত বা বত্তব্য যদি অন্যের আবেগ বা ধারণাকে challenge করে তাহলে সেই বক্তব্য প্রকাশের সংগত ও সুচিন্তিত কারণ থাকতে হবে এবং অবশ্যই আমাকে বিরুদ্ধ মত শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার দেয়াল, আমি যা খুশি লিখব, ভালো না লাগলে অন্যত্র যাও গোছের যুক্তি আসলে কোন যুক্তি হতে পারে না।

প্রকাশ্যে শুধু মত নয়, ঠাট্টা, তথ্য বা অনুভূতি বিনিময়ও content হিসেবে শেষপর্যন্ত জনসম্পত্তি। কেবল মাত্র দুজনের বা কয়েকজনের ব্যক্তিগত চৌহদ্দি নয়। তার জন্যে private message আছে।ফেসবুকের প্রকাশিত post গুলির নিরিখে কাউকে বিচার করার সময় তাই সে কোন কোন বিষয়ে নীরব সেটাও দেখা জরুরী। আর তাহলেই কি লিখব আর কি লিখব না-র ধারণাটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!