শালপাতা

ল্যান্সডাউনের মোড় থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত প্রায় রোজ লোকটা হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসত। হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিয়ে তিন মাস অখন্ড অবসর চলছে আমাদের – তখন এতো কম্পিটিটিভ এক্সামের বালাই ছিল না – চার বন্ধু মিলে ওই চত্তরটা ঘুরে বেড়াই দিনরাত । অরুপই প্রথম লোকটাকে নজর করেছিল।

শীর্ণ, দীর্ঘকায় চেহারা, একগাল দাড়ি আর ময়লা প্যান্টশার্টে দিব্যি ট্রেডমার্ক পাগল বলে মনে হয়। কিন্তু কাঁধে ঝোলাব্যাগ নিয়ে গম্ভীর মুখে রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে যাওয়ার মধ্যে একটা অভিজাত ব্যাস্ততা ছিলো দেখার মত।

“কোথায় যায় বলতো মালটা ?” রাহুল জানতে চাইত।

কেন? হাজরার মোড়ে যায়। আমরা হইহই করে বলতাম।

সে যায়। কিন্তু কেন যায়? সেটা একটা ধাঁধা ছিল। বহুদিন পর্যন্ত।

শেষমেষ ঠিক হ’ল লোকটাকে ফলো করা হবে। রোজ একই সময়ে ল্যান্সডাউন থেকে হাজরা হেঁটে গিয়ে লোকটা কি করে জানা দরকার।

আমরা তারপর দিন পিছু পিছু হেঁটে গেলাম হাজরা অবধি। আপনমনে বিড়বিড় করতে করতে লোকটা হাজরার মোড়ে, সাহাবাড়ির লক্ষীনারায়ণ মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়াল। ওইখানটায় তখন একটা লাল রঙের ঢাউস পোস্টবাক্সো ছিল, যেগুলো এখন আর দেখা যায় না।

সেই পোস্টবাক্সোর কাছে গিয়ে, ঝোলার মধ্যে থেকে বার করে এনে লোকটা গুনে গুনে ছাব্বিশটা শালপাতা পোস্ট করে দিল। হতভম্ব হয়ে দেখতে গিয়ে একটু কাছেই গিয়ে পড়েছিলাম বোধহয়, লোকটা স্মিত হেসে আমাকে বলল , “এটা লোকাল সিটির বাক্সো তো ?”

কোনমতে ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলতে হ’ল।

“তাহলে কালকেই পৌঁছে যাবে।” এই বলে লোকটা লম্বা লম্বা পা ফেলে রাস্তা পেরিয়ে হাজরা পার্কের দিকে চলে গেল।

ওই ছাব্বিশটা শালপাতা কাদের কাছে যাবার ছিলো, তা আমার আজও অজানা ।

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!