১৯শে জুন। প্রভু যেসুর ১৬৩২ বৎসর।

কারাভেলা নদীর ঢেউয়ের মাথা ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রায় উড়ে চলেছে। পর্তুগীজ তরী ক্ষিপ্রতার জন্য বিশ্ববিখ্যাত। আয়তনে সুবৃহৎ না হলেও এর গঠন জল কেটে দ্রুতগতিতে চলার উপযোগী। কারাভেলার বর্গপালগুলি স্থলগামী সামুদ্রিক বায়ুতে সারসের উদরের মত স্ফীত, রশিগুলি টানটান। যাতে জলের ঘর্ষণে গতিনাশ না হয় সে কারণে জাহাজের দাঁড়গুলি গুটিয়ে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দিয়োগো তাভারেসের দাস সংগ্রহের অভিযান সম্পূর্ণ, সে আর কালক্ষেপ না করে হুগলী প্রত্যাবর্তন করতে চায়।

সূর্যের প্রথম আলো আসার পূর্বে আকাশের বর্ণ দোয়াতগোলা কালির মত নীল। অন্তত আরও এক ঘটিকা বিলম্বে সদ্যোত্থিত রবির কমলারঙের সমান্তরাল আলোক নদীতীরবর্তী বৃক্ষরাজির মাথায় বিধাতার আশীর্বাদের মত এসে পড়বে। দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে নদীপ্রান্তর বড় মনোরম; কারাভেলার উপরে একঝাঁক বক স্বর্গীয় পথপ্রদর্শকের মত উড়ে চলেছে।

কারাভেলার রাজসিক সৌন্দর্যের পাশে পশ্চাৎগামী একডজন অপরিচ্ছন্ন মলিন নাউ অতি দৃষ্টিকটু। দুর থেকে তাদের সিংহের পিছনে ছুটন্ত একপাল সারমেয়র মত দেখতে লাগে। বাংলার নদীবেষ্টিত দেশে এই নাউগুলি ফিরিঙ্গি জাহাজ বলে অতিপরিচিত ও ঘৃণিত। কিন্তু এই নাউগুলি কিছু কম পর্তুগীজ নয়। তাদের চেহারা কদাকার হলেও প্রতিটি নাউ কারাভেলার মতই নৌসক্ষম – এমনকি কিছু বেশীও হতে পারে। দশকের পর দশক ধরে সুন্দরবন সংলগ্ন হুগলী নদী ও তার শাখানদীগুলিতে এরা নির্বিচারে লুঠতরাজ করে। এদের প্রত্যেকটির খোলের ভিতর আছে অপ্রশস্ত সারি সারি কাষ্ঠনির্মিত তাক, সেখানে শায়িত অবস্থায় অপহৃত মানুষকে লোহার শিকলে ঠাসাঠাসি করে বেঁধে দাসরুপে চালান ও বিক্রয় করে দেওয়া হয়। ঐ হতভাগ্য মানুষগুলির অনেকেই জাহাজের খোলেই ভবলীলা সাঙ্গ করে; তখন তাদের দেহগুলি নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। বিষ্ঠা, বমি আর মূত্রে মাখামাখি হয়ে এবং পর্তুগীজ দস্যুদের চাবুকের ঘা খেয়েও যারা বেঁচে থাকে তাদের উগোলিমের দাসবাজারে বিক্রয় করা হয় নতুবা মালয়দেশে চালান করা হয়। এই নাউগুলির কাপ্তিনরা সকলেই পর্তুগীজ এবং সরকারীভাবে ফেরারী। বর্তমানে এরা প্রভুযেসু ও পর্তুগালের স্পেনীয় রাজার নামে উগোলিমের ফৌজের সঙ্গে যুদ্ধচুক্তিতে যোগ দিয়েছে। নাউগুলিতে অপহৃত দাস ঠাসা। মানবপূরীষের তীব্র কটু গন্ধ এই জাহাজগুলির নিত্যসঙ্গী – নদীর বাতাসে তার ঝলক ভেসে এলে দিয়োগো ঘৃণায় নাসিকাকুঞ্চন করে।

অভিযোগের প্রশ্ন অবশ্যই নেই। এই দাসগুলি এখন পর্তুগীজ প্রতিরোধের সর্বাপেক্ষা বড় ভরসা।

একাদশী ছায়ার মত দিয়োগোর পিছনে এসে দাঁড়াতে সে বলল, যুদ্ধ শেষ হলে তোমার কোর্টমার্শাল হবে সাংরেসাহেব। মনে রেখো।

যথেষ্ট ধর্ষণ ও লুঠপাট করতে না দেওয়ায় এমনিতেই মাল্লারা তার সম্পর্কে অভিযোগ করে। গতরাত্রে সে পর্তুগীজ নিয়ম লঙ্ঘন করে মহিলা বন্দী নিয়ে এসেছে।

একাদশী দার্শনিকসুলভ উদাসীনতায় বলল, প্রভুর যা ইচ্ছা।

দিয়োগো আড়চোখে একাদশীকে একবার দেখে গম্ভীরমুখে বলল, মেয়েটি কোথায়?

একাদশী উদ্গত হাস্য সংবরণ করে উত্তর দিল, নিচে চোরকুঠুরিতে বন্দী। আমি কি তাকে ঐ নাউগুলির একটিতে পাঠিয়ে দেব? সে পিছনে দস্যুজাহাজগুলির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বলল।

হে ঈশ্বর! না! শিহরিত হয়ে বলে দিয়োগো। একাদশীর হাতে হালচক্রটি ধরিয়ে দিয়ে সে রেলিংয়ে ভর দিয়ে সরে দাঁড়ায়। নদীর বাতাসে তার কাঁধপর্যন্ত লম্বা স্বর্ণালী কেশ অবিন্যস্ত হয়ে পড়েছে, দুহাত দিয়ে সে কেশ সংযত করার চেষ্টা করে। দিয়োগো অতিসুদর্শন, একাদশীর চেয়ে সে দীর্ঘকায় – লালনীল পর্তুগীজ রাজপোশাকে তাকে অ্যাপোলোর মত দেখতে লাগে। একাদশী অবশ্য অ্যাপোলো কে জানে না। তার চোখে দিয়োগো দক্ষিণরায়ের মত সুদর্শন; তবে একটু কৃশকায় এই যা!

মহিলা দাস এনে তুমি খুব ভুল করেছ একাদশী। অন্যমনস্কভাবে বলল দিয়োগো।

সুন্দরী ও যুবতী মহিলা দাসী, মার্কুই! একাদশী নিম্নকন্ঠে বলল।

ঠিক। একদল ক্ষুধার্ত কুক্কুরের সামনে একটি মাংসখন্ড। তোমার এই আচরনের ফলে আমার সন্মুখে এক নীতিদ্বন্দ উপস্থিত হয়েছে যার সমাধান করার সময় নেই এখন। দিয়োগো বলতে থাকে।

নীতিদ্বন্দ কি, মার্কুই?

অনেকদিন পর দিয়োগো হা হা করে হেসে ওঠে। সেই হাসি তার সুদর্শন মুখমন্ডলে সূর্যের কিরণের মত উদ্ভাসিত হয়। বালক বয়সে তার পিতা তাকে বাঙ্গালায় এনেছিলেন, তারপর থেকে এইদেশের জলহাওয়ায় সে বড় হয়েছে, এইস্থানের মানুষ ও মৃত্তিকা তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। শৈশব বলতে তার কাছে আবছা আবছা স্মৃতি। সেই স্মৃতিতে সুদুর পর্তুগালের কোনএক গ্রামে নীলআকাশের নীচে ঘুরছে এক হাওয়াকল, ঝাপসা হয়ে গেছে মায়ের মুখ, শুধু মনে আছে তাঁর দীর্ঘ স্কার্টে সে মুখ গুঁজে শুনতে পেত কে যেন ডেকে বলছে, সেনোরা সেনোরা।

ওহে সারেং! এইবার বন্দেলচার্চে তোমাকে আমি খৃষ্টধর্মে দীক্ষা দেব। স্মিতকন্ঠে বলল দিয়োগো।

একাদশী সহজভাবে হেসে বলল, আমি তো দীক্ষিত!

অ্যাঁ? হোলি ট্রিনিটি!

আজ্ঞে। তবে তার আগে আমি মুসলমান ছিলাম। কিছুদিন বৌদ্ধও ছিলাম বটে। একাদশী বলল।

দিয়োগো সকৌতূহলে বলল, এই ধর্মবিশ্বাসগুলি কেমন? উত্তম?

অতি উত্তম, মার্কুই। বিশেষকরে গলায় ছুরি ধরলে এরচেয়ে উত্তম কিছু হয় না। বলতে বলতে একাদশীর মুখ চপল হাসিতে ভরে গেল। তারপর সে বলল, ইসলাম খুব ভাল, এই ধর্মে গরুর মাংস খাওয়া চলে। বৌদ্ধরাতো আরও ভাল, তারা শূকরমাংসেও আপত্তি করে না।

দিয়োগো হাসতে লাগল। সে বলল, তাহলে তুমি কি? মুসলমান না বৌদ্ধ?

একাদশী বলল, ঠিক ঠাহর হয় না। তবে যদি দুটি খেতে পাই আর মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই জোটে, খেরেস্তানও হতে পারি। সবার আড়ালে একবার মা মনসার গীত গেয়ে নিলেই  হল।

প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়োগো বলল, নিচে গিয়ে নোঙরের কাছি প্রস্তুত কর একাদশী। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমরা দামোদরের মুখে এসে পড়ব। ঐখানে জাহাজ বাঁধতে হবে।

হুগলীনদীর নৌপথ বক্রী। স্থানে স্থানে চড়া ও বালিখাতের জন্য এই নদীতে নৌপরিবহন দুঃসাধ্য। তার উপরে দিয়োগো কেবল অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জাহাজ চালাচ্ছে। দামোদরের মুখে তাকে একবার মানচিত্র দেখতে হবে। একাদশী হালচক্র ছেড়ে নিচে নামতে গিয়ে একপলক দাঁড়িয়ে বলল, মার্কুই?

বল।

ঐ মাগী যখন আমার পায়ে পড়ে কাঁদছিল তখন তাকে তরোয়ালের এককোপে মেরে ফেলাই উচিত ছিল। সে আমি জানি। কিন্তু তাকে যে কেন বাঁচিয়ে রেখে এই জাহাজে তুলেছি তা জানি না।

দিয়োগো নিরুত্তর রইল। সব প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।

একাদশী একটু ইতস্তত করে বলল, এটাই কি নীতিদ্বন্দ, মার্কুই?

দিয়োগো সন্মুখে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির দিকে চেয়ে রইল। ভোরের আলোয় সুবিশাল জলরাশি চিকমিক করছে যতদুর চোখ চলে। দুইপাশে অস্পষ্ট তীরভুমি। শতসহস্র বৎসর এই নদী একই ভাবে বয়ে চলেছে। এর প্রসারতার সামনে মানুষ নিজেকে অকিঞ্চিৎকর মনে করে। একাদশীর প্রশ্নের উত্তর তার সঠিক জানা নেই। ঘাড় ফিরিয়ে যতক্ষণে সে এই কথা তাকে বলতে গেল ততক্ষণে সে সিঁড়ি বেয়ে নিচে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

অন্ধকার অরণ্যের মধ্য দিয়ে সে ছুটছে। দিগভ্রান্ত সে, জানে না কোন দিকে যাচ্ছে। অরণ্যের পথ চারিদিকে একইরকম। ছুটতে ছুটতে হাঁফিয়ে উঠলেও দাঁড়াবার উপায় নেই কারণ তার খুব বিপদ। এমনকি পিছন ফিরে তাকানোও যাবে না। কৃষ্ণকায় কিছু ছায়ামূর্তি তাকে তাড়া করে ছুটে আসছে। এই ছায়ামূর্তিগুলি ঠিক ছুটছে না, বরং তারা যেন হাওয়ায় ভেসে আসছে। তাদের অশরীরি হাতে দড়ির ফাঁস। প্রাণ বাঁচাতে সে ছুটছে।
ছুটতে ছুটতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল সে। অশরীরি ছায়ামূর্তিরা তাকে ঘিরে ধরে। আতঙ্কে চিৎকার করতে চায় সে, কিন্তু গলা দিয়ে স্বর নির্গত হয় না। হাতে পায়ে দড়ির ফাঁস পাকিয়ে ধরে। দড়িগুলি জীবন্ত, সরীসৃপের মত সেগুলি তার শরীর বেয়ে উঠতে থাকে, শরীরের গোপন অংশগুলি সন্ধান করতে থাকে। আতঙ্কের মধ্যেও সে আশ্চর্য হয়ে অনুভব করে সেই স্পর্শে তার শরীর দ্রব হয়ে যাচ্ছে। যেন তার বোধ দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে – একটি অংশ আতঙ্কে অবশ হয়ে যাচ্ছে আর আরেকটি অংশ উত্তেজিত ও কামনাময়।

একটি অন্ধকার মুখ ঝুঁকে পড়েছে তার মুখে। সেই অবয়বহীন মুখে দুটি অঙ্গারের মত জ্বলন্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর্ভেদী সেই দৃষ্টি তার চোখ ভেদ করে তার মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করছে। ক্রমশ তার চোখ উত্তপ্ত হয়ে উঠল। হাত তুলে চোখ ঢাকার চেষ্টা করতে গিয়ে বোঝা গেল তার চোখে দিনের রৌদ্র এসে পড়েছে। ক্রমশ দেখা গেল কাঠের জাফরির মধ্যে দিয়ে রোদ আসছে। সে শুয়ে আছে, পিঠে কাঠের পাটাতনের শীতল স্পর্শ। বড় তৃষ্ণার্ত বোধ করল সে।

হুঁশ ফিরে আসতে টের পাওয়া গেল সে একটি আলোআঁধারী প্রকোষ্ঠে শুয়ে আছে। নাকে এল সিক্ত পাটরজ্জুর সোঁদা গন্ধ। ঘাড় ঘোরাতে চোখে পড়ল স্তুপাকৃতি রজ্জু। তার পিঠের নিচে কাঠের পাটাতনটি দোদুল্যমান আর প্রকোষ্ঠের মধ্যে কোন অন্ধকার কোনে, যেখানে চোখ চলে না, কাচের বোতলে ঠোকাঠুকি লেগে টুং টাং শব্দ হচ্ছে। উপরে তাকালে জাফরির ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ দৃশ্যমান। জিহ্বা দিয়ে সে শুস্ক ঠোঁট চাটল। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ।

উঠে বসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল সে। তার হাতদুটি রজ্জুদ্বারা বাঁধা। সেই বাঁধন কেউ দক্ষহাতে দিয়েছে, কারণ হাতে তা চেপে বসেনি শুধু তাকে বদ্ধ করে রেখেছে। হাতের রজ্জুর বাঁধন একটি ফাঁস ঘুরে চলে গেছে পায়ের দিকে। তার পাদুটিও বাঁধা। বিদ্যুৎচমকের মত স্মৃতি ফিরে এল তার। স্পষ্ট, বিশদ আর মর্মান্তিক রকমের উজ্জ্বল সেই স্মৃতি। দাউদাউ আগুনে তার গ্রাম, ঘর পুড়ে যাচ্ছে, চারিদিকে রক্তপিপাসু মানুষের উন্মত্ত নৃত্য, আর্তনাদ, চিৎকার আর শরীরের উপর লাঠি পড়ার আওয়াজ। আর জীবন্ত রক্তমাংসের মধ্যে কেটে ঢুকে যাওয়া তরবারির ধাতব শব্দ। তারপর তার মনে পড়ল সেই সর্বনাশের মুহূর্ত, রক্তের ফোয়ারার মধ্যে লুটিয়ে পড়তে থাকা দীর্ঘদেহী লোকটি। তার একমাসের বিবাহিত স্বামী। কাল রাত্রে সে যে বিধবা হয়েছে সেই স্মৃতি তীক্ষ্ণ যন্ত্রণার মত বিদ্ধ করল তাকে।

আবছা আবছা মনে হল কেউ একজন যেন হেঁটে এসেছিল তার কাছে। তার হাতে একটা কৃপান ছিল বোধহয়। সে এই ব্যক্তিকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল। এইখান থেকে তার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেছে। সে কি তার শিরচ্ছেদ করতে চাইছিল? তার মাথায় হাত রেখেছিল কি? তাহলে সে বেঁচে আছে কি করে?

চোখ জ্বালা করছে তার, তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। আবার উঠে বসতে গিয়ে খেয়াল হল তার উর্দ্ধাঙ্গ সম্পূর্ণ নগ্ন। ছিন্ন আঁচল পায়ের কাছে পড়ে আছে।

অন্তরীক্ষ থেকে কাশির শব্দ হল যেন। জাফরির ফাঁকে একটি মুখ তাকে দেখছে। ক্লেদাক্ত সেই মুখে একজোড়া লালামাখা ঠোঁট,  ঠোঁটে ঝুলে আছে দেশি তামাকের ধূমায়মান চুটি। ঘাড় ফিরিয়ে সেই মুখটি বাংলায় কাউকে বলল, ছেমড়ির ঘুম ভেঙ্গেছে। অমনি তার পাশে হাজির হল আরেকটি পীতবর্ণ মুখ। নরুনচেরা চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে সেই মুখ দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু বলল। তারপর দুটি মুখই কর্কশ গলায় হাস্য করতে লাগল।

মরিয়ার মত আড়াল খুঁজতে লাগল সে। কিন্তু নড়াচড়া করার উপায় নেই তার। দুজোড়া লোলুপ চোখের নিচে খাঁচায় পড়া জন্তুর মত সে গোঙাতে লাগল।

এমন সময় উপরে সজোরে বেত্রাঘাতের মত শব্দ হল আর মুখদুটি কাতর আর্তনাদ করে মূহূর্তে  অদৃশ্য হয়ে গেল। উপরে, দৃষ্টির অগোচরে, কেউ ভারী গলায় বলল, দুর হ বেবুনের দল। ফের যদি হেথায় দেখেছি তাহলে তোদের অন্ডকোষ কেটে তোদেরকেই খাওয়াব।
তারপর ধাতব শব্দ করে জাফরি খুলে গেল আর ঝুপ করে প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করল একাদশী সর্দার।

একাদশীর পরণে মালকোঁচা মেরে পরা ছোট ধুতি আর বুকখোলা পিরান। তার পদযুগল নগ্ন কিন্তু মাথায় একটি বস্ত্রখন্ড পাকিয়ে পাগড়ির মত পরা। সেটি খুলে একাদশী তার নগ্ন বক্ষদেশ ঢাকা দিল। তারপর সে প্রকোষ্ঠের এককোনে উপবেশন করল।

আমাকে ছোঁবে না! অসহায় ভাঙ্গা গলায় বলল সে।

– আরে রও মাইয়া। তোমার কোন ক্ষতি করতে আসি নাই। 

হাত বাড়িয়ে কুঠুরির কোন থেকে একটি কাচের বোতল নিয়ে এসে একাদশী ঢাকা খুলে তার মুখের কাছে ধরে বলল, জল খাও। তোমার তেষ্টা পেয়েছে।

কৃতজ্ঞচিত্তে সে জল খেতে লাগল। বুক জুড়িয়ে দেওয়া সুমিষ্ট জল। গলায় বুকে উপছে পড়ল জলের ধারা। জল খাওয়া শেষ হলে বোতলটি সরিয়ে রেখে একাদশী বলল, এইবার তোমার জাত গেল। এ হল খেরেস্তান জল। এই বলে সে হাসল।

শুস্ক কন্ঠে হঠাৎ জলপান করে বধূটি কাশছিল। কাশি থামলে সে বলল, আমাকে মারলে না কেন?

– জানি না। আমিও ভাবতেছি।

– তুমি…তোমরা কি আমার সতীত্বনাশ করবে?

একাদশী বোতলের মুখে ছিপি আটকাতে আটকাতে নির্বিকারভাবে বলল, প্রভুর সম্পত্তিতে ভাগ বসানোর অধিকার ভৃত্যদের নাই।

– প্রভু কে?

– সময়ে জানতি পারবে মাইয়া।

কন্যার দুইচোখে জল উপছে উঠল। রুদ্ধকন্ঠে সে বলল, আমার ভাতারকে খুন করেছ, আমাকেও কেন মার নাই?

একাদশী অন্যদিকে তাকিয়ে রইল আর বধুটি নিঃশব্দে অশ্রুপাত করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর একাদশী বলল, তোমার ভাতারকে আমি মারি নাই। অবশ্য মারতেই পারতাম। অথবা সে আমাকে মারতে পারত।

বধু চোখ তুলে একাদশীর দিকে তাকাতে সে বিরসকন্ঠে বলল, মরণের কথা কোয়ো না। গা গুলায়। আমি এককুড়ি বছর যমের সঙ্গে কোলাকুলি করে বেঁচে আছি। কঠিন বটে কিন্তু বেঁচে আছি সেটাই বড় কথা।

তোমাদের দলপতির কাছে আমাকে নিয়ে চল। কন্যা চোখ মুছে বলে।

যাব। যদি না আবার তোমার মরনের ইচ্ছা হয়। এই কথা বলে একাদশী মেয়েটির পায়ের ফাঁসে টান দিয়ে বাঁধন খুলে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। বধূ সেই স্খলিত রজ্জু টেনে হাতের বাঁধন খুলে কব্জি ঘষে রক্তসঞ্চালন করতে থাকে। এতক্ষণে এই আলোঅন্ধকারে তার চোখ সয়ে এসেছে। সে প্রকোষ্ঠটি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে। প্রকোষ্ঠের মধ্যে অনেক রশির স্তূপ, সম্ভবত এইগুলি জাহাজ নোঙর করার কাজে লাগে। এককোনে একটি কাঠের পেটিকায় সার সার কাচের বোতল। প্রকোষ্ঠের উচ্চতা অত্যল্প, দন্ডায়মান একাদশীর বুকের উপরের অংশ জাফরির দরজা দিয়ে বাইরে অদৃশ্য। কন্যা একাদশীর পায়ের দিকে দেখতে লাগল। খাটো ধুতির নিচে পা দুটি জানু থেকে দৃশ্যমান, পায়ের পেশীগুলি সবল। এই পাদুটির মালিক কঠোর শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্ত মনে হয়। একাদশীর হাত দুটি দীর্ঘ, সেই হাতে দৃঢ় রজ্জুর মত পেশী, কোথাও একছটাক মেদ নেই। ডান হাতের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেল বাহুর নিচের দিকে এক ক্ষতচিহ্ন। ক্ষতচিহ্নটি টাটকা, এখনও ত্বকের চামড়া হাঁ হয়ে রক্তাভ বর্ণ মাংস দেখা যাচ্ছে। এর উপর মুছে যাওয়া হরিদ্রার প্রলেপ। কন্যার মনে পড়ল সে গত রাত্রে এই লোকটিকে ধারালো কাস্তে দ্বারা আক্রমণ করেছিল। স্বগতোক্তির মত সে বলল, আমি তোমাকে খুন করতে গেছিলাম।

একাদশী নিচু হয়ে ঝুঁকে তাকে দেখতে লাগল। উজ্জ্বল আলোর পর অন্ধকার প্রকোষ্ঠের ভিতর দৃষ্টিপাত করার জন্যে তার চক্ষুদুটি কুঞ্চিত হয়ে আছে। বধুটির মুখের দিকে চেয়ে বাহুর ক্ষতস্থানে অন্যমনস্কভাবে হাত বোলাতে বোলাতে সে বলল, তা বটে। যাও তোমাকে মাফ করলাম। তবে আর ও চেষ্টা কোরো না।

কন্যা তিক্তস্বরে বলল, নিজের লোকদের খুন করে বেড়াও, কেমন মানুষ তুমি?

– আমার কোন নিজের লোক নাই।

– তুমি তো ফিরিঙ্গি নও, তুমি তো আমাদের মত –

একাদশী রুঢ়ভাবে তাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল, শোন মাগী! আমি বোম্বেটে। এই ফিরিঙ্গি হল আমার মালিক। তিনি যা আদেশ করেন আমি তাই করি।

বধুর সুন্দর মুখশ্রী তীব্র ঘৃণায় বেঁকেচুরে গেল। সে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল, নরকের নোংরা কীট! তুমি ঐ ধর্ষক, লুন্ঠনকারী ফিরিঙ্গিদের চেয়েও নিকৃষ্ট। মা কালী তোমার বংশ নির্বংশ করবেন। এই বলে সে হাঁফাতে লাগল।

একাদশী তার দিকে প্রস্তরবৎ মুখে তাকিয়ে রইল। তার চোখদুটি শীতল কিন্তু কপালের কাছে একটি শিরা দপদপ করছে। এইভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে তার মুখমন্ডল এক বালকসুলভ চপল হাসিতে ভরে গেল। সে হাসতে হাসতে বলল, মা কালী নয় গো, বল মা মেরী। তোমাকে ফিরিঙ্গিরা উঠিয়ে এনেছে, তোমার আত্মীয়স্বজন তোমাকে গাছের ডাল দিয়েও ছোঁবে না!!

বধুটি শূন্যদৃষ্টিতে একাদেশীর দিকে চেয়ে রইল। বাস্তবিকভাবে সে একপ্রকার মৃত। প্রথমত সে বিধবা দ্বিতীয়ত তাকে ফিরিঙ্গি ধরেছে। তার চোখের উপর দিয়ে সারা জীবন ছবির মত, স্বপ্নের মত ভাসতে ভাসতে চলে গেল একপলকে। তার পল্লী, মাঠ, ঘাট, নদী, প্রান্তর, তার বালিকা বয়সের অশ্বত্থ গাছের দোলনা, মাটির কুটির, নিকোনো দাওয়া, তুলসীমঞ্চ আর প্রদীপের আলো। এখন এইসব যেন পূর্বজন্মের স্মৃতি।

ভেঙ্গে পড়া বিবশ গলায় বলল সে, তোমার পায়ে পড়ি গো, আমাকে ছেড়ে দাও। 

একাদশী জাফরির দরজা দিয়ে কর্কশ কন্ঠে কাউকে কোন আদেশ দিল। তারপর উপর থেকে এনে কাঠের শানকিতে ধোঁয়া ওঠা ফ্যানভাত কুঠুরির মেঝেতে রেখে বলল, তোমার যাবার আর কোন জায়গা নাই। তুমি এখন দাস। খাও। আর বেঁচে থাক।

তারপর সে আর কিছু বলার আগেই দুহাতের উপর ভর দিয়ে মসৃন দক্ষতায় লাফিয়ে উঠে জাফরি দরজা দিয়ে উপরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ঝনঝন করে দরজা পুনরায় বন্ধ হয়ে গেল। মেঝেতে বসে সে জাফরির মধ্য দিয়ে দেখল নীল আকাশে একখন্ড শুভ্র মেঘ। মেঘেদের কেউ বন্দী করতে পারে না।

যাব ওরে বাছা আয় রে আয়
কলার মান্দাসখানি জলে ভেসে যায়
কলার মান্দাস ভাসে গাঙ্গুড়ের জলে
বেহুলা ভাসিয়া যায় কান্ত লইয়া কোলে
ভাইদেরকে ভইবা দিয়া ভাসিয়া চলিল
গদাবুড়ার ঘাটে ভেলা উপনীত হল
তোর মুখে ছাই গদা তোর মুখে ছাই
মা মনসার কাছে আমি জলে ভেসে যাই
ধনা মনা দুটি ভাই গো ধেয়ে আইল ঘাটে
নেতা ধোপানী কাপড় কাচে গো তমলুকের ঘাটে।

তুমুল উলুধ্বণির মধ্যে দুলে দুলে গাইছে গ্রাম্যবধুর দল। অদুরে একটি কলাগাছের ভেলা। তার উপর কাঁথার বিছানায়, সর্ষের বালিশ মাথায় চন্দন আর সিঁদুর মাখানো এক মৃতদেহ ফুলমালা দ্বারা সজ্জিত। দেহটি একটি তরুনবয়স্ক পুরুষের। কলাগাছের শয্যাপার্শ্বে প্রায়মূর্ছিতা এক রমনী, সকলে তাকে এসে প্রণাম করছে। এই ভেলাটি নদীর ঢালু তীরের উপর রাখা, কিছু দুরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে জটলা করছে। এই ব্যক্তির সর্পদংশনে মৃত্যু হয়েছে। বাঙ্গালায় সর্পাঘাতে মৃত ব্যক্তিকে দাহ করা হয় না। সাপেকাটা মড়া কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে, যেমন লক্ষীন্দরকে নিয়ে বেহুলা ভেসে গিয়েছিল মৃত স্বামীর জীবন ফিরে পাবার আশায়। এই লোককথা বাঙ্গালায় পদ্মপুরাণ নামে খ্যাত।

মূর্ছিতা রমনীকে দেখতে দেখতে দিয়োগো তাভারেস ভাবল, এইই নিশ্চয়ই বিধবা।

ভাঁটা থেকে যতক্ষণ না ফের জোয়ার হয়, কারাভেলা দামোদরের মুখে নোঙর করে আছে। হুগলী নদীর ভাঁটা তীব্র শক্তিশালী, এমনকি দিয়োগোর দক্ষ নৌচালনাও এই ভাঁটার সঙ্গে যুঝবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। জলদস্যুদের জাহাজগুলিকে মাঝনদীতে নোঙর করার আদেশ দিয়েছে দিয়োগো, তীরসংলগ্ন পল্লীগুলির নৈকট্য এদের পক্ষে সুবিধাজনক নয়। তাছাড়া মালয় আর বাঙ্গালি নাবিক মাল্লারা খুব আড়ম্বরপূর্বক দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পছন্দ করে। এমনকি যুদ্ধের সময়েও এই বিলাসিতা ছাড়া তারা থাকতে অক্ষম। দিয়োগো কয়েকবার ভাতের থালা আঁকড়েধরা জলদস্যুর মৃতদেহ দেখেছে।

জাহাজের সন্নিকটে নদীতীর সবুজ গালিচার মত মনোরম। উচ্চতীরে সারি সারি বট, অশ্বত্থ, পিপুল বৃক্ষ দৃঢ় সন্নিবদ্ধ উচ্চতায় যেন প্রহরারত। এই ঘন বৃক্ষের শ্রেনীর পিছনে নজর চলেনা তবে বৃক্ষরাজির মাথার উপরে ভেসে ওঠা ধূম্রকুন্ডলী নিকটেই কোন বড় পল্লীর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। নগ্ন, বাদামী গাত্রবর্ণের একদল শিশু তীরের কাছে এসে কারাভেলার প্রতি কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।  এমন রাজসিক তরী এরা জীবনে দেখেনি বলে মনে হয়। তবে এরা জানে এই জাহাজ ফিরিঙ্গিদের – ফিরিঙ্গিরা বিধর্মী, তাদের ভগবানের নাকি স্বর্গে এক রাজত্ব আছে।

কলাগাছের ভেলার নিকটে যে জটলা তার থেকে একটু দুরে কয়েকজন লোক এক গৌরবর্ণ পুরুষের মাথায় খড়ের ছাতা ধরে আছে। এই ব্যক্তি মুন্ডিতমস্তক ও দীর্ঘ শিখাধারী। এঁর পরনে একটি ধুতি কিন্তু উর্দ্ধাঙ্গে একটি শুভ্র উপবীত ব্যতীত কোন বস্ত্র নেই। এই মানুষটির ভঙ্গিতে আছে একধরনের গর্বমিশ্রিত আভিজাত্য। সকলেই একে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছে। দিয়োগো ছোট থেকে বাঙ্গালায় মানুষ হয়েছে, সে জানে এই ব্যক্তি ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণরা হিন্দু বর্ণাশ্রমে শ্রেষ্ঠতম, এঁরা সংস্কৃতজ্ঞ ও পন্ডিত। কোন অস্ত্র ও সম্পদ ব্যাতিরেকে কি করে কোন মানুষ এমন দৃপ্ত ও গর্বিত হতে পারে তা দিয়োগোর বুদ্ধির অগোচর; যদিও সে শুনেছে বাঙ্গালায় এখন ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রবল প্রতাপ, ভুরশুত রাজারা ব্রাহ্মণ। এই গ্রাম্য ব্রাহ্মণটিকেও কেউ অগ্রাহ্য করার স্পর্ধা দেখাবে না বলেই মনে হয়।

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জোয়ার, মার্কুই। পিছন থেকে একাদশী মনে করাল। জাহাজে একটি সূর্যঘড়ি আছে বটে কিন্তু একাদশী যে কোন ছায়া দেখে সময় বলতে অভ্যস্ত।

দিয়োগো তীরের দিক থেকে চোখ না ফিরিয়ে একাদশীকে জিজ্ঞাসা করল, ঐ বিধবা রমনীকে কি জীবন্ত দাহ করা হবে বলে মনে কর?

নাহ। একাদশী নির্লিপ্তভাবে বলল। ঐ নারীকে সহমরনে যেতে হবে না, কারণ লোকাচার অনুযায়ী তার স্বামী মৃত নয়, সে প্রাণ ফিরে পেতেও পারে।

বটে? যেমন তোমার ডানা গজাতে পারে আর তুমি উড়ে যেতে পার। এই বলে দিয়োগো হাসতে লাগল।

একাদশীও হাসতে লাগল। সে বলল, ঠিক। যেমন ঈশা ক্রুশে ঝুলে মরে গিয়েও বেঁচে উঠতে পারে। ঠিক তেমনি ঐ সাপেকাটা লোকটিও বেঁচে উঠতে পারে।

দিয়োগো একাদশীর দিকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। প্রভু যেসুর সম্পর্কে অন্য কেউ এইজাতীয় কথা বললে সে তার জিহ্বা কেটে নিতে পারে। একাদশীর ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এই মানুষটির উদাসীন ঔদ্ধত্য তাকে বিস্মিত করে। তার মহান পিতা পেদ্রো কেন যে একাদশীকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন নি সে জানে না। তবে এইটুকু সে বোঝে একাদশীকে কোন নিয়মের নিগড়ে বাঁধা অসম্ভব।

নদীর জল বাড়ছে। ক্রমশ ঢাক বেজে উঠল আর প্রবল উলুধ্বণির সঙ্গে লোকজন কলাগাছের ভেলাটি জলের মধ্যে ঠেলে দিতে লাগল। প্রথমে কিছুক্ষণ সেটি অলস ভাবে তীর বরাবর ভেসে যাচ্ছিল  তারপর আসন্ন জোয়ারের স্রোত তাকে দ্রুত নদীর অভ্যন্তরে নিয়ে যেতে লাগল। তীরভূমিতে তখন চলেছে প্রবল হরিধ্বণি আর ঢাকের বাজনা। নোঙর তুলতে এসে মাল্লারা উৎসাহভরে ঘটনাক্রম দেখতে লাগল। জলচর নাবিকদের ডাঙ্গার জীবনের প্রতি তীব্র কৌতূহল থাকে।

এমন সময় হঠাৎ এই গোলমাল ছাপিয়ে কারাভেলার নিচের পাটাতন থেকে হৈচৈ শোনা গেল। দিয়োগো ঝুঁকে পড়ে দেখতে পেল, একাদশী কারাভেলার রেলিং টপকে জলে লাফিয়ে পড়ছে! কি হল? একাদশী জলে ঝাঁপ দিচ্ছে কেন?

দা কুনহা নিচের পাটাতন থেকে চিৎকার করে বলল, কাপ্তিন! দাসী মাগী পালিয়েছে!!

Loading

সবাইকে বলুন
error: বিষয়বস্তু সুরক্ষিত!